1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

‘বিষাদময় পৃথিবী’ আনন্দময় বাংলাদেশ:নাইম ইসলাম নিবির 

  • Update Time : রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১
  • ২৫০ Time View

‘বিষাদময় পৃথিবী’ আনন্দময় বাংলাদেশ

— নাইম ইসলাম নিবির 

সারা দুনিয়া যখন ভয়ে থরথর করে কাঁপে, তখন বাঙালি কিভাবে সাহস দেখিয়ে বুক চাপড়িয়ে হু-হ্যাঁ গর্জন করে তার একটি বাস্তব উদাহরণ লিখে গেছেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক মিনহাজুস সিরাজ। দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সাথে তিনি সুবে বাংলায় এসেছিলেন সেই মধ্যযুগে। তার লিখিত অমর গ্রন্থ তারিখই ফিরোজ শাহীতে তিনি আবু বঙ্গালা অর্থাৎ বাঙালিদের পিতা সম্পর্কে যে রম্য কথা লিখে গেছেন তা কালের বিচারে বাঙালি জাতির জন্য এক মহাদলিলে পরিণত হয়েছে। ভয়ের সময় বাঙালি যেমন বিরূপ আচরণ করে তেমনি আনন্দ কিংবা বিষাদের সময়গুলোতে তাদের আচরণ খুবই অদ্ভুত প্রকৃতির হয়ে থাকে। বাংলা প্রবাদ-প্রবচনে হর্ষে বিষাদ, বাড়া ভাতে ছাই, কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ ইত্যাদির বাহার দেখলেই বাঙালির রুচিবোধ এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আমাদের দেশের প্রকৃতি-পরিবেশ এবং প্রানিকুলের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বাংলা সাহিত্যের অমর কবি ডিএল রায় তার একটি বিখ্যাত গানে সে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, তা এক কথায় অনন্য। আমরা কমবেশি সবাই গানটি শুনেছি, কিন্তু গানের মধ্যে কবি যে স্যাটায়ার করেছেন অথবা প্রশংসার ছলে যে তিরস্কার করেছেন তা লক্ষ করার মতো অন্তর্দৃষ্টি খুব কম লোকের মধ্যেই দেখা যায়। সেই বিখ্যাত গানের প্রথম চরণ হলো, ধন-ধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা…। কবি তার গানে বলেছেন, আমাদের এই পৃথিবী ধনরাজি-ফসলাদি এবং বাহারি ফুলে শোভিত। সেই পৃথিবীর মধ্যে ‘সকল দেশের রানী’ হলো আমাদের দেশ যা কিনা একই সাথে ‘সকলের’ মধ্যে সেরা। কবির দৃষ্টিতে কেন সেরা সেটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, দেশটি অতীতের স্মৃতি ঘিরে থাকতে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে যেভাবে ব্যস্ত থাকে তাতে তাদের পক্ষে বর্তমান নিয়ে চিন্তা করার সময় থাকে না। এই জন্য ডিএল রায় মনে করেন যে, এমন দেশ আর পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ডিএল রায় বাংলার আকাশের চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারার উজ্জ্বলতার ছবি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পৃথিবীর কোথাও বাংলার আকাশের মতো বিদ্যুৎ চমকায় না। এ দেশের আকাশে যেভাবে ক্ষণে ক্ষণে কালো মেঘ ভর করে এবং কালবৈশাখীর জন্ম দেয় তা অন্য কোথাও দেখা যায় না। আকাশে যখন বিদ্যুৎ চমকায় কালবৈশাখীর কালো মেঘ এবং ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে পাখিরা যখন আর্তচিৎকার করে তখন আমরা সেগুলোকে পাখির কূজন বা কলকাকলি মনে করে মনের আনন্দে ঘুমিয়ে পড়ি। তারপর সব কিছু যখন শান্ত হয়ে যায়- পাখিদের ভয় দূর হয় এবং কালো মেঘের ছায়া দূরীভূত হয়ে সুবেহ সাদিক দেখা দেয়, তখন পাখিরা মনের আনন্দে যে গান শুরু করে আমরা সেই গান শুনে জেগে উঠি।

আমাদের দেশের নদ-নদী, পাহাড়, শস্যক্ষেত এবং বাতাসের বর্ণনাতেও কবি নিদারুণ স্যাটায়ার করেছেন। তার মতে, এ দেশের নদীর মতো স্নিগ্ধতা যেমন দুনিয়ার কোথাও নেই তেমনি ধূম্র পাহাড় অন্য কোথাও দেখা যায় না। বাংলার প্রমত্তা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধানতম নদ-নদীর দুটো প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো বর্ষা মৌসুমে যৌবনপ্রাপ্ত হলে নিজেদের দু’কূল ভেঙে মহাতাণ্ডব চালায় এবং প্রায় প্রতি বছরই দু’কূল প্লাবিত করে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি করে। বাংলার নদ-নদীর এই ভয়ঙ্কর অবস্থা এবং শীতকালে অর্থাৎ যখন ক্ষমতা থাকে না তখন একেবারে চুপচাপ হয়ে যাওয়ার মধ্যে কবি পৃথিবীর অন্যসব বিখ্যাত নদী যেমন সিন্ধু, দানিয়ুব, রাইন, নীল বা হোয়াংহোর কোনো মিল খুঁজে পাননি।

বাংলার ফুল-ফল-পাখি এবং মধুখেকো অলিদের চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে কবি বলেন, যখন গাছের শাখাগুলো ফুলে ফুলে ভরে যায় এবং সেই দৃশ্য দেখে বনের নিঃস্বার্থ পাখিরা গান গাইতে থাকে, তখন মধুলোভী অলি গুন গুন শব্দে গুঞ্জরিয়া দলে দলে ধেয়ে আসতে থাকে। মৌ-লোভী পতঙ্গ তাদের হুল উঁচিয়ে মনের আনন্দে মধু খেয়ে উদর পূর্তি করতে থাকে এবং পেট ভরে গেলে এই পতঙ্গগুলো যেভাবে ফুলের ওপর শয্যা পেতে ঘুমিয়ে পড়ে সেই দৃশ্য কবি পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাননি। এ দেশের ধূম্র পাহাড় অর্থাৎ পাহাড়কে কেন্দ্র করে যে ধূম্রজাল অথবা পাহাড় থেকে বের হওয়া ধোঁয়া কিংবা হয়তো পাহাড়ের কোনো অস্তিত্বই নেই- অথচ ধোঁয়া দ্বারা তৈরি অর্থাৎ ভুয়া জিনিসকে পাহাড় মনে করে সেই পাহাড়ের পদতলে নিজেকে বিসর্জন দেয়ার জন্য মানুষের যে আকুতি, সেই আকুতি বোঝাতে গিয়ে কবি যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তা বোঝার ক্ষমতা ঠিক কতজনের রয়েছে সেটি আমি জানি না।

বাংলার আমজনতা, নেতা-নেত্রী, আকাশ-বাতাস-পাহাড়-সমুদ্রকে নিয়ে কবি ডিএল রায়, ঐতিহাসিক মিনহাজুস সিরাজ প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তি যেসব মূল্যবান কথাবার্তা বলে গেছেন, তা ২০২১ সালে এসে অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। কারণ বর্তমানের যে সমাজচিত্র তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ পৃথিবীর সব দেশ থেকে আলাদা একটি দ্বীপ। অন্যান্য দেশের লোকজন যা করে তা এই দেশের লোকজন প্রায়ই করে না। অন্যান্য দেশের লোকজন যা বলে কিংবা যেভাবে চিন্তা করে আমরা ওসবের ধারের কাছ দিয়েও হাঁটি না। আমরা বলি, আমরাই শ্রেষ্ঠ! আমরাই সব বুঝি- বাকিরা সব হারাম। আমাদের এই জাতীয় বৈশিষ্ট্য এবং নৈতিক ব্যাপার-স্যাপার যে কতটা নির্মম বাস্তব তা বোঝা যাবে যদি কেউ বর্তমান সময়ের বৈশ্বিক সঙ্কট করোনা নিয়ে জাতীয় উদাসীনতা এবং করোনাসংক্রান্ত ভয়-ভীতি, দুঃখ-কষ্ট-বেদনা এবং হতাশার প্রতি সমব্যথী না হয়ে বিভিন্ন রঙতামাশা-আলোর ঝলকানি-আতশবাজি-পুতুলনাচ থেকে শুরু করে অন্যান্য বাহারি নৃত্যের তেহারি রঙঢং সঙ দেখার চেষ্টা করেন।

সুতরাং আমাদের এই চরিত্র নিয়ে ডিএল রায় যদি লেখেন- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না’ক তুমি- সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি… পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি, কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি, গুঞ্জরিয়া আসে অলি, পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে, তারা ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে- তবে আমরা আতশবাজি ছাড়া আর কিইবা করতে পারি!

নাইম ইসলাম নিবির : রাজনীতিক ও কলামিস্ট

nayemulislamnayem148@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..